লেখালেখিতে ফ্রিল্যান্সিং পেশা

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় ও দ্রুত এগিয়ে যাওয়া একটি কাজের ক্ষেত্র হলো লেখালেখি। যেটিকে আমরা আর্টিকেল রাইটিং বা কনটেন্ট রাইটিং অথবা কনটেন্ট ডেভেলপিং বলে থাকি। যারা ইংরেজিতে ভালো তারা লেখালেখিই কে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। আয় করতে পারেন হাজার ডলার। বাংলাদেশে এমন অনেক ফ্রিল্যান্স রাইটার আছেন যারা ঘন্টায় ১০/১২ ডলারে লেখালেখি করে আয় করে থাকেন। এছাড়া দেশি ইন্টারনেট মার্কেটিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে আপনি অনায়াসেই ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতে পারেন। তাই স্মার্ট ক্যারিয়ার হিসেবে
অবশ্যই আর্টিকেল রাইটিং একটি যথার্থ হতে পারে।

আর্টিকেল রাইটিংকে পেশা হিসেবে নিতে আপনাকে অবশ্যই বেশ কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। প্রথমত, আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি বানান এবং ব্যাকরণ সঠিকভাবে জানা থাকতে হবে। কমপ্লেক্স ও কম্পাউন্ড বাক্য ঠিকভাবে লেখার যোগ্যতা থাকতে হবে। আপনাকে ব্রিটিশ ও আমেরিকান ইংরেজি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, আপনি যে বিষয়ে লেখালেখি করতে চান সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তর ধারণা থাকতে হবে। বিশেষ করে সর্বশেষ প্রযুক্তি, ঐ বিষয় সম্পর্কে আপডেটেড তথ্য জানতে হবে। একই বিষয়ে অন্য যারা লেখালেখি করছে তাদের ক্ষেত্রে কি সমস্যাগুলো আছে সেগুলো জেনে আপনাকে সেই সমস্যাগুলো দুর করে আপনার লেখাটি ফুটিয়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনাকে অবশ্যই মৌলিক লেখা লিখতে হবে। আয়ের ক্ষেত্রে প্রথমত আপনি নূন্যতম ১ ডলার থেকে শুরু করতে পারেন। এটি দিয়েই শুরু করতে পারেন। তবে আপনার কাজের দক্ষতা ভালোভাবে দেখাতে পারলে অবশ্যই ভালো রেটে কাজ করতে পারবেন।
লেখার ধরণ
বিষয়ভিত্তিক যেকোনো লেখালেখিই হলো কনটেন্ট রাইটিং। কনটেন্ট রাইটাররা বিভিন্ন কাজের জন্য কনটেন্ট লিখে থাকেন। তবে সেটি যদি ওয়েবের জন্য লেখা হয় তাহলে আমরা সেটিকে ওয়েব কনটেন্ট হিসেবে বিবেচিত করি। এছাড়া প্রিন্টিং যেমন বই, ব্রশিউর, লিফলেট বা অন্যান্য প্রচারণার কাজে কনটেন্ট ডেভেলপ করা হয়ে থাকে। একজন কনটেন্ট ডেভেলপার এ ধরনের সব কাজই করতে পারেন। নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো।

ট্রান্সলেশন : ইংরেজি-বাংলা বা বাংলা-ইংরেজির অনুবাদের কাজ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কম থাকে। বরং প্রফেশনাল সাইট যেমন- ট্রান্সলেটরসবেজডটকম, প্রজডটকম ইত্যাদি সাইটে থাকে এবং এসব সাইটে প্রথমেই পে করে মেম্বারশিপ নিতে হয়। তাই সমস্যা। ব্যক্তিগতভাবে অনুবাদের কাজে আগ্রহ থাকলেও এ সমস্যার জন্য কাজ করা সমস্যা হয়।

ট্রান্সক্রিপশন : এটি খুবই ভালো আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে যদি আপনি দক্ষ হতে পারেন। আপনাকে একটি অডিও ফাইল কানে শুনবেন বা একটি ভিডিও দেখবেন এবং সেখানে উচ্চারিত ইংরেজি হুবহু টাইপ করে দেবেন। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন মূল দুটি দক্ষতা, ইংরেজি শুনে বোঝা এবং দ্রুত টাইপিং দক্ষতা। সাধারণত এক ঘণ্টার অডিও বা ভিডিওর জন্য ১০-১৫ ডলার পেমেন্ট করা হয়। আপনি যদি শুধু এই কাজের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠেন, তাহলে বেশ কাজের সুযোগ আছে।

সামারাইজেশন : সামারাইজেশন কাজটি হচ্ছে একটি আর্টিকেল বা ব্লগ পোস্টকে ১০০-১৫০ শব্দে রূপ দেয়া। কখনো কোনো বইয়ের সংক্ষিপ্ত রূপও চাইতে পারে।

রিজিউম রাইটিং : আমেরিকান কর্পোরেট জগত বা ইন্টারনেট জগতের জন্য উপযুক্ত রিজিউমে বা সিভি তৈরি করতে পারলে এ ধরনের কাজও যথেষ্ট পাওয়া যাবে।

প্রেস রিলিজ রাইটিং : বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা ওয়েবসাইটের জন্য প্রেস রিলিজ লেখার কাজ প্রায়দিনই পাওয়া যাবে। এজন্য আপনাকে প্রেস রিলিজ লেখার সঠিক ফরমেট ও স্টাইল জানতে হবে। এজন্য হয়তো পিআরওয়েবডটকম সাহায্য করতে পারে। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি সঠিক স্টাইলে পিআর তৈরি করতে পারেন। প্রেস রিলিজের পেমেন্ট আর্টিকেল রাইটিংয়ের চেয়ে বেশি হয়। একটির জন্য ৫-১০ ডলার হয়ে থাকে। কাজও প্রায়ই থাকে।

পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন : এটি আসলে ইংরেজি ও পাওয়ার পয়েন্ট দক্ষতার সমন্বয়। আপনাকে কোনো বইয়ের চ্যাপ্টার বা মিটিংয়ের বিষয়বস্তু বা টিউটোরিয়াল সম্বন্ধে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হবে। পেমেন্ট ভালো।

আয়ের ধরণ
আয়ের ধরণের উপর নির্ভর করে কনটেন্ট রাইটিংকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো কম আয়ের ও আরেকটি বেশি আয়ের কনটেন্ট রাইটিং। কম আয়ের কনটেন্ট রাইটিংয়ের কাজ মূলত যারা এই পেশায় নতুন বা অপেক্ষাকৃত দক্ষতা কম তারা করে থাকেন। এক্ষেত্রে আপনাকে আর্টিকেল রিরাইটিং বা কম শব্দের কনটেন্ট লিখতে হবে। তাই আয়ের পরিমানও কম। আর্টিকেল রিরাইটিং হলো একটি লেখা দেখে সে অনুযায়ি আরেকটি কনটেন্ট লেখা যেটি প্রথম লেখার হুবহু হতে পারবে না। সহজে বলা চলে, একটি লেখাকে নিজের মতো করে লেখাকেই রিরাইটিং বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উভয় লেখার বিষয়বস্তু একই থাকবে। এগুলো মূলত ৩০০ থেকে ৬০০ শব্দের হয়ে থাকে। আর ছোট আর্টিকেলের ক্ষেত্রে শব্দের পরিমান ১০০ থেকে ২০০ শব্দের হয়ে থাকে। এ ধরণের আর্টিকেলের ক্ষেত্রে আপনি ঘন্টায় ১ থেকে ৩ ডলার চার্জ করতে পারেন।

আর বেশি আয়ের ক্ষেত্রে কাজটি মূলত অপেক্ষাকৃত বেশি শব্দের কনটেন্ট লেখা, প্রুফরিডিং বা এডিটিং বিষয়টি জড়িত। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ভালো দক্ষতাসম্পন্ন হতে হবে। আপনি কনটেন্ট লেখার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই অন্যের লেখা কপি করতে পারবেন না। আর যদি ভুলেও সেটি করে থাকেন তাহলে আপনার ক্যারিয়ার খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারবে না। এখানে অবশ্যই আপনার লেখাকে মৌলিক হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার লেখাটি ৪০০ থেকে ১০০০/১২০০ শব্দের হতে পারে। এগুলো মূলত ওয়েব কনটেন্টের ক্ষেত্রে। তবে আপনাকে যদি কোনো পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা প্রিন্টেড অন্য কোনো কিছুর জন্য লিখতে হয় তাহলে শব্দের পরিমান বাড়তে পারে।

কি লিখবেন, কিভাবে লিখবেন
লেখার বিষয়টা নির্ভর করে লেখকের দক্ষতা, রুচি, সহযোগিতা সর্বোপরি যে সাইট বা বিষয়ের জন্য লেখা হচ্ছে সেটার চাহিদার ওপর। তবে বিষয়বস্তু যা-ই হোক না কেন একজন ওয়েব কনটেন্ট রাইটারকে কোনো নির্দিষ্ট টপিক নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে ডেটাবেজ তৈরি করতে হয়। উন্নত বিশ্বে একজন কনটেন্ট রাইটারকে একজন সাংবাদিক আবার গবেষকও অভিহিত করা হয়। ওয়েবসাইটের ধরন অনুযায়ী ঠিক করে নিতে হয় লাইন অফ অ্যাকশন। যেমন স্ট্যাটিক পোর্টালের ক্ষেত্রে শুধু গবেষণার কাজই মানানসই। আবার ডায়নামিক পোর্টালের ক্ষেত্রে গবেষণার পাশাপাশি সাংবাদিকতার সুযোগও রয়েছে। তবে কনটেন্ট রাইটার, গবেষক বা সাংবাদিক যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন আপনাকে লিখতে হবে একেবারেই মৌলিক লেখা। কারণ ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী সবার কাছেই উন্মুক্ত, অবারিত। বর্তমানে সহজলভ্যও বটে। সুতরাং আপনার স্ক্রিপ্টে কাট-পেস্ট এর প্রভাব থাকা যাবে না। বিশেষ করে আপনি যদি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে হুবহু বা আংশিক এদিক-ওদিক করে মেরে দেন তো কপিস্কেপ-এর মতো সফটওয়্যার দিয়ে তা সহজেই ধরা পড়বে। আর বইয়ের মতো প্রতিটি সাইটেরই স্বত্বাধিকার রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ফেসেও যেতে পারেন। তাই কোনোভাবেই কপি করার চিন্তা করবেন না।

লেখা অবশ্যই প্রাঞ্জল ও গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে। আপনার লেখা যেকোনো কোনো এডিটর কোনো অংশ ফেলতে না পারেন বা একজন পাঠকের কাছে অবাঞ্চিত না মনে হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। একজন পাঠক সবসময়ই মৌলিক কিছু প্রত্যাশা করেন। রাইটার হিসেবে আপনাকে মনে রাখতে হবে, যারা ওয়েবসাইটে আপনার লেখা পড়বেন, তিনি মিনিট প্রতি বা ঘণ্টা প্রতি নির্দিষ্ট পয়সা খরচ করে পড়বেন। সুতরাং তিনি চাইবেন সবচেয়ে কম সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিস পড়তে। তাই তথ্য নির্ভর, সংক্ষিপ্ত বিষয়ভিত্তিক লেখাই আপনাকে লিখতে হবে। এতে লেখক হিসেবে আপনার গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়বে তেমনি উপার্জনের পথও প্রশস্থ হবে।

কতটুকু শ্রম দিতে হবে?
লেখাটি ইংরেজিতে দক্ষ হয়েও যারা বেকার তাদের জন্য। আপনাকে ধরে নিতে হবে আপনি এক ঘণ্টায় ১৫০০ বা আরো বেশি শব্দ টাইপ করতে পারবেন। দ্রুত একটি লেখা পড়ে আরেকটি লেখা লিখতে পারবেন। ক্লান্তি কতখানি সামাল দিতে পারবেন, কত ঘণ্টা এভাবে কাজ করবেন, তা নির্ভর করছে আপনি কতখানি কাজ পাচ্ছেন এবং নিজে কতক্ষণ করতে পারছেন, তার ওপর।

কাজের যোগ্যতা
আগেই বলেছি, কনটেন্ট রাইটার হতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো হতে হবে। প্রয়োজন শুদ্ধ বানান। এক্ষেত্রে এমএস ওয়ার্ডের স্পেলিং চেকারের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
আমেরিকান স্পেলিং শুদ্ধভাবে জানতে হবে। ছোট, মাঝারি ও লম্বা বাক্য লিখতে হবে। তাই গ্রামার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ ও আমেরিকান গ্রামার সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা ভালো। টাইপিংয়ের কাজ যত দ্রুত ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ভালো হতে হবে। আর ফ্রিল্যান্সিঙ করার জন্য প্রয়োজনীয় যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ সমন্বয়, কাভার লেটার লেখা, আপডেটেড থাকা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ভালো কনটেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য
প্রথমত ইন্টারনেট ব্যবহারের খুটিনাটি জানতে হবে। তারপর গবেষণার জন্য থাকতে হবে তীক্ষ্ণ একাগ্রতা। থাকতে হবে নিজস্ব সৃজনশীলতায় তথ্যকে স¤পূর্ণ করে লেখার ক্ষমতা এবং সংগৃহীত তথ্যকে সংঘবদ্ধভাবে সাজিয়ে পাঠককে নতুন নতুন স্বাদ পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা। রাইটার হিসেবে একেবারে নতুন হলেও সমস্যা নেই। তবে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। লেখার ইচ্ছা, ভালো রচনাশৈলী ও সময়োপযোগী বিষয়বস্তু নির্বাচনের সামর্থ্য থাকলে এ পেশায় আপনি সফল হবেন।

যদি নতুন হন!
মনে রাখতে হবে লেখা যেন যুক্তিযুক্ত হয়। লেখার আগে তাই জানা চাই কি লিখছেন, কেন লিখছেন। নিজের কোনো শখ, দৈনন্দিন জীবন, ব্যক্তিগত কোনো অভিজ্ঞতা বিষয়ে লিখতে হলে লেখার শুরুটা হবে আবেগপ্রবণ। কারণ আবেগ পাঠককে নাড়া দেয়। এ ক্ষেত্রে ঘটনার খুটিনাটিতে না গিয়ে বরং যা ঘটেছিল ঠিক তাই বর্ণনা করুন। অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার না করে সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দ বেছে নিন। লেখা শেষে বারবার পড়ুন। ভালো লেখা পড়া, ই-মেইল, চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ওয়েব রাইটারদের সঙ্গে ভাবনা চিন্তার আদান প্রদান করুন। লেখার মধ্যে নাটকীয়তা রাখার চেষ্টা করুন। পাঠকরা যাতে চমক পায় সে রকম কিছু রাখুন আপনার লেখায়। সব শেষে বলতে হয়, বিরূপ মন্তব্য ভেঙে না পড়ে মৌলিকত্ব বজায় রেখে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যান।