প্যাথলজিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার

প্যাথলজি কী : হাসপাতাল-কিনিকগুলোর পরীাগারে পরীা-নিরীার জন্য থাকে নানা যন্ত্রপাতি। রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনসিসে ব্যবহৃত বিভিন্ন চিকিৎসা-যন্ত্রপাতির পেছনে যে বা যারা কাজ করেন, তারাই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। ল্যাবরেটরি সায়েন্সের একটি শাখা প্যাথলজি। রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত, মূত্রসহ বিভিন্ন নমুনা পরীা-নিরীা করা হয় এখানে। নির্ণয়ের পর কোন অ্যান্টিবায়োটিক কতটুকু প্রয়োগে জীবাণু নির্মূল সম্ভব তাও জানায় প্যাথলজি বিভাগ। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রিপোর্ট তৈরির পর প্যাথলজিস্ট সেটি
পুনরায় নিরীা করেন। প্রদত্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই ডাক্তার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

চাহিদা : বর্তমানে দেশে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ২৯টি আর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৬৯। রাজধানীসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা শহরে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল বা কিনিক, ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি রয়েছে। আরও রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি কিনিক। আবার নতুন নতুন চিকিৎসাসেবার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এখানে রোগীর বিভিন্ন ধরনের পরীা-নিরীার প্রয়োজন পড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তিন-চারজন চিকিৎসা-প্রযুক্তিবিদ থাকা দরকার।

চাহিদা কোন বিষয়ে : চিকিৎসা-প্রযুক্তি পড়ানোর প্রতিষ্ঠান সরকারি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিগুলোয় ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির জন্য ছয়টি ভিন্ন অনুষদ রয়েছে। অনুষদগুলো হচ্ছেÑ ল্যাবরেটরি, রেডিওগ্রাফি, ফিজিওথেরাপি, স্যানিটারি পরিদর্শক প্রযুক্তি (এসআইটি), ডেন্টিস্ট্রি ও রেডিওথেরাপি। তুলনামূলক চাহিদার বিবেচনায় ল্যাবরেটরি, ফিজিওথেরাপি, রেডিওগ্রাফি ও ডেন্টিস্ট্রি ডিগ্রিধারীদের চাহিদা বেশি। তাই যারা এ পেশায় আসতে চাইছেন, তারা বেছে নিতে পারেন এসব বিষয়। তবে অন্য বিষয়গুলোর চাহিদাও অনেক।

পড়াশোনা : চাকরির সুযোগ বিবেচনায় কেউ চিকিৎসা-প্রযুক্তিবিদ হিসেবে পেশা গড়তে চাইলে এসএসসি পাসের পর এখন ভর্তি হতে পারেন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি)।

ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির অধীনে বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে মোট আটটি প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা ও বিএসসি কোর্সে পাঠদান করায়। সেগুলো হলোÑ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ঢাকা। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, রাজশাহী। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, বগুড়া। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, রংপুর। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, বরিশাল। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ঝিনাইদহ। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, চট্টগ্রাম। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, সিলেট। এর বাইরেও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু ইনস্টিটিউট আছে, যারা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির অধীনে পড়ে।

ভর্তির সাধারণ যোগ্যতা : সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ইচ্ছুক প্রার্থীকে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ২.৫০ নিয়ে এসএসসি পাস হতে হবে অথবা দাখিল (বিজ্ঞান) পরীায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সব অনুষদে চাকরিরত বিভাগীয় প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। তাদের েেত্র যারা ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক পাস, কেবল তারাই আবেদন করতে পারবেন। আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে িি.িফমযং.মড়া.নফ।

ভর্তি পরীা : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক প্রার্থীকে সরকারি আইএইচটিগুলোয় ভর্তির জন্য এসএসসি সিলেবাস অনুযায়ী ১০০ নম্বরের ১ ঘণ্টার লিখিত পরীায় অংশ নিতে হবে। পরীার প্রশ্ন হবে বহুমুখী নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) ধরনের। সাতটি বিষয় থেকে প্রশ্ন হবে। বিষয়গুলো হচ্ছেÑ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান। সাধারণ জ্ঞান বাদে প্রতিটি বিষয় থেকে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। আর সাধারণ জ্ঞানে থাকবে ১০ নম্বর। কোনো মৌখিক পরীা হবে না। লিখিত পরীা ও এসএসসি বা সমমান পরীায় প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।

স্নাতক পড়ার সুযোগ আছে : কিছুদিন আগেও চিকিৎসা-প্রযুক্তিবিদদের উচ্চশিার সুযোগ ছিল না। ২০০৮ সালে এই সুযোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পর্যায়ে ঢাকা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিস্টে এবং কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্নাতক কোর্স আছে।

মেয়েদের কাজের সুযোগ : এ পেশায় মেয়েদের অনেক সুযোগ, যদিও মহিলা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় কম। বর্তমানে অবশ্য ছেলেদের পাশাপাশি অনেক মেয়ে এ বিষয়ে পড়াশোনা করছে।

কাজের সময় : প্রতিষ্ঠানভেদে কাজের সময় ভিন্ন হয়ে থাকে। মেডিক্যাল কলেজগুলোয় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা সাধারণত সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কিনিকগুলোয় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের ডিউটি টাইম শিফট হিসেবে ভাগ করা থাকে। সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় মর্নিং, ইভিনিং ও নাইট তিন শিফট থাকে। মর্নিং শিফট সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা; ইভিনিং শিফট বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা ও নাইট শিফট রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা।

বেতন-ভাতা ও পদোন্নতি : চিকিৎসা-প্রযুক্তিবিদের চাকরি সরকারের তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার। তাই যারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেবেন, তারা সেই মোতাবেক বেতন পাবেন। তবে রয়েছে পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা অর্জনের সুযোগ। বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা-প্রযুক্তিবিদের বেতন প্রায় ৮ হাজার থেকে শুরু হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বেতন তো বাড়বেই। এ ছাড়া সরকার বা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও তারা পাবেন।