ক্যারিয়ার গড়তে পারেন স্ক্রিনপ্রিন্টে

ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, টাই-ডাই ইত্যাদির পাশাপাশি বর্তমানে কাপড় ছাপার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে স্ক্রিনপ্রিন্ট। স্ক্রিনপ্রিন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো শুধু কাপড়ই নয়, কাগজেও ছাপা বা প্রিন্ট করা যায়। স্ক্রিনপ্রিন্ট একধরনের ছাপার পদ্ধতি। স্ক্রিনপ্রিন্ট অনেকদিন আগে থেকেই ছাপার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে বর্তমানে এটি খুবই জনপ্রিয়।


টি-শার্ট, মগ বা খেলনার গায়ে নকশা আঁকতে স্ক্রিনপ্রিন্ট
দারুণ উপায়। ব্যানার আর ফেস্টুনেও এর ব্যবহার তুঙ্গে। অল্প পুঁজিতে এটি ভালো ব্যবসা। আশপাশে খেয়াল রেখে চললে আপনিও জমিয়ে দিতে পারবেন।
প্রথম দিকে বাসার কোনো একটা ঘরকেই কারখানা বানিয়ে নিতে পারেন। ৫০০ থেকে ৬০০ বর্গফুটের জায়গা হলেই হলো। তবে এর ‘স্ক্রিনপ্রিন্ট অ্যানালগ ট্রেড লাইসেন্স’ লাগবে। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, টিন ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন থাকলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।
কাজের ক্ষেত্র
এ কাজে বড় ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। তবে সৃজনশীলতা দরকার। রং, কাপড় ও কাজ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। পোশাকের মধ্যে টি-শার্টেই সবচেয়ে বেশি স্ক্রিনপ্রিন্ট করা হয়। এছাড়া ফতুয়া, পাঞ্জাবি, টপস, জিনসেও কিছু কিছু কাজ হয়। তৈজসপত্রের মধ্যে বেশি স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ হয় মগের ওপর। আজকাল জগ, গ্লাস, প্লেট, পিরিচ, পেয়ালায়ও স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের খেলনা, পুতুল, চাবির রিং, পেপার ওয়েট, ক্রেস্ট, মেডেল, কোটের বড় বোতামেও স্ক্রিনপ্রিন্ট করানো হয়। ব্যানার এবং ফেস্টুনেও স্ক্রিনপ্রিন্ট হয়ে থাকে।
প্রাথমিক পুঁজি
ছোটখাটো কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পুঁজি হলেই চলবে। কাজ বেশি হলে লোকও নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য পাঁচ থেকে সাতজন দক্ষ ও আধাদক্ষ লোক নিতে পারেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
টি-শার্ট কিংবা মগের কাজ করতে ছোট ছোট যন্ত্রপাতি লাগে, তবে ব্যানার করতে চাইলে পুঁজি বেশি লাগে। কারণ ব্যানারের কাজে বাড়তি লাগবে ফ্ল্যাট টেবিল। একটি ৫০ ফুট ফ্ল্যাট টেবিলের দাম ৫০ হাজার টাকা। তাই প্রথম দিকে শুধু টি-শার্ট কিংবা মগের ওপর স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ দিয়ে শুরু করতে পারেন। এজন্য লাগবে একটি রেডি টেবিল, যার দাম পড়বে দুই হাজার টাকা ও ফ্রেম প্রতিটি ৪০০ টাকা। বিভিন্ন ধরনের বেসিক লিকুইড রং কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ২০০-৪০০ টাকায়। রঙের পাশাপাশি বিভিন্ন কেমিক্যালও ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাবার প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, এম ৫০ প্রতি কেজি ৩০০ টাকা ও এনকে ফাইন্ডার প্রতি কেজি ২০০-৪৫০ টাকা।
কোথায় বিক্রি করবেন
কারখানার কাছাকাছি একটি দোকানও করতে পারেন। সেখানেই তৈরি করা জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া সিরামিকসের দোকানে তৈজসপত্র সরবরাহ করতে পারেন। কাজের অর্ডার পেতে পারেন ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমেও। তবে বেশি কাজের জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠান অবশ্য নিজ উদ্যোগেই সম্মেলন বা বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।
টি-শার্টে স্ক্রিনপ্রিন্ট
আজকাল প্রায় সব দোকানেই স্ক্রিনপ্রিন্ট করা টি-শার্ট বিক্রি হচ্ছে। তাই এসবের অর্ডারও ভালো। টি-শার্টের কাপড় হিসেবে সিঙ্গেল জার্সি, ফাইন ও পিকে কাপড়ই বেশি ব্যবহার হয়। এগুলো পাউন্ড হিসেবে কিনতে হয়। এরপর মাপ অনুযায়ী তৈরি করিয়ে নিতে হয়। এসব কাপড় পাইকারি হারে প্রতি পাউন্ড ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। রেডিমেড টি-শার্টও কিনতে পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় এমন অনেক দোকান আছে। এখানে প্রতি পিস টি-শার্ট ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়।
আয় কেমন
ডিজাইন ও কাপড় ভালো হলে শোরুমে একটি টি-শার্ট ২৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর এমন একটি টি-শার্ট তৈরিতে খরচ হয় ১০০-১২০ টাকা। অর্থাৎ একজন ব্যবসায়ীর প্রতিটি টি-শার্টে আনুষঙ্গিক খরচ বাদে ৪০-৬০ শতাংশ লাভ থাকে। তবে কাজের গুণগত মান যত ভালো হবে, লাভও তত বেশি হবে। উৎপাদন বেশি হলে নিজস্ব শোরুম বাদে আশপাশের শোরুমেও সরবরাহ করতে পারেন।
ব্যানারের চাহিদা বেশ
ছোট-বড় অনেক অনুষ্ঠানেই ব্যানার করানোর রেওয়াজ আছে। এছাড়া পণ্যের প্রচারেও ব্যানার টাঙানো হয়। তাই ব্যানারের কাজ পাওয়া যায় অনেক। লাভও বেশ ভালো। ব্যানারের কাপড় পাইকারি দামে পাওয়া যাবে ঢাকার ইসলামপুরে।
বর্তমানে পাতলা ও মোটা দুই ধরনের কাপড়ের ওপর ব্যানার করা হয়। কাপড় গজপ্রতি ১৫-২০ টাকা। এই হিসাবে ১০ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট চওড়া ব্যানারের কাপড় কিনতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকা। আর স্ক্রিনপ্রিন্ট করাতে খরচ হয় ৩০০-৩৫০ টাকা। সব মিলিয়ে ১০ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট চওড়া একটি ব্যানার করতে ৩৫০-৪০০ টাকা খরচ হয়; কিন্তু বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
মগের ওপর স্ক্রিনপ্রিন্ট
প্লেইন মগ কেনার পর কেবল ছাপ দিলেই তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। তবে সিরামিকসের দোকানগুলোর চাহিদার প্রতি নজর রাখা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের চাহিদাও বোঝা যায়। নকশাও সে রকম করা চাই। প্লেইন মগ পাইকারি কিনতে পাওয়া যায় গুলিস্তান ও নিউমার্কেটে। প্রতি পিসের দাম ৪৫-৫০ টাকা। তার ওপর স্ক্রিনপ্রিন্ট দিতে খরচ হয় ২০-২৫ টাকা। তবে পরিমাণে বেশি হলে খরচও কমে যায়। মগে স্ক্রিনপ্রিন্ট দিতে হাতে ঘোরানো বিশেষ ধরনের ফ্রেমের দরকার হয়। এটি পুরান ঢাকার নবাবপুর থেকে কেনা যায়। মূল্য তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। প্রিন্টের স্থায়িত্ব বাড়াতে প্লাস্টিক সোলও ব্যবহার করা হয়।
আয় কেমন
চাহিদা যত বেশি, লাভও তত বেশি। নিজেরা মগ কিনে স্ক্রিনপ্রিন্ট করলে ৭০-৮০ টাকা খরচ হয়। আর বিক্রি হয় ১৫০-২০০ টাকায়। প্রতি পিসে লাভ থাকে ৮০-১৩০ টাকা।
প্রশিক্ষণ নেবেন যেখানে
সরকারিভাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন স্ক্রিনপ্রিন্টের ওপর দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেয়। এজন্য ৫০ টাকা ভর্তি ফরম এবং ৩০০ টাকা প্রশিক্ষণ ফি বাবদ খরচ হবে।
ঠিকানা : প্রধান নকশাবিদ, নকশা কেন্দ্র,
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক), ১৩৭-১৩৮ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।