ক্যারিয়ার গড়তে পারেন ট্র্যাভেল এজেন্সিতে

বাংলাদেশে চাকরির বাজারে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়াও চাকরির বাজারে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে চাই চাকরির বাজার এবং চাকরি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। বাংলাদেশে চাকরি প্রার্থীদের একটি ভুল ধারণা রয়েছে। আর তা হলো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই যে কোনো চাকরির জন্য যোগ্য হিসেবে দাবি করা যায়। তবে
এটি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য নয়। মূলত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ২২০০টি ট্র্যাভেল এজেন্সি রয়েছে। ট্র্যাভেল এজেন্সির আকার এবং কাজের পরিধির ওপর নির্ভর করে ছোট বা মাঝারি মানের ট্র্যাভেল এজেন্সিতে ১৫ থেকে ২০ জন এবং বৃহৎ কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী ট্র্যাভেল এজেন্সিতে ৫০ থেকে ৮০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে থাকে।
রিজার্ভেশন অফিসার
ট্র্যাভেল এজেন্সির কাজ বলতে অনেকেই আমরা শুধু প্লেনের টিকিট রিজার্ভেশনের কাজ করাকেই বুঝে থাকি। একজন ভ্রমণকারীর প্রয়োজনানুসারে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট রিজার্ভেশন, কনফার্মেশন অথবা বাতিল করার কাজ করে থাকে ট্র্যাভেল এজেন্সিসমূহ। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে যে ব্যক্তিবর্গ করে থাকেন তাদের বলা হয়ে থাকে টিকিট রিজার্ভেশন অফিসার। যে কোনো ট্র্যাভেল এজেন্সিতে টিকিট রিজার্ভেশন অফিসারের দায়িত্ব অনেক। মূলত তাদের নিকট হতেই ট্র্যাভেল এজেন্সিতে আগত ব্যক্তিরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথিবীর যে কোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। ট্র্যাভেল এজেন্সির অফার এবং ব্যবসায়িক কর্মপরিধির ওপর ভিত্তি করে ছোট বা মাঝারি আকারের ট্র্যাভেল এজেন্সিতে টিকিট রিজার্ভেশন অফিসার থাকেন ৫ জন থেকে ১৫ জন। সেই হিসেবে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী আনুমানিক ২২০০ ট্র্যাভেল এজেন্সিতে এই পেশাতে বিপুল পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আবার নতুন নতুন এয়ারলাইন্স চালু হওয়ায় এই সেক্টরে আরো বেশি জনবলের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ফলে এই পেশাতে দক্ষ জনবলের বেশ অভাব রয়েছে। এই পেশাতে আসতে হলে একজন ব্যক্তির খুব বেশি উচ্চশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিসহ টিকিটিং এবং রিজার্ভেশনসংক্রান্ত বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। ট্র্যাভেল এজেন্সিতে টিকিট রিজার্ভেশনে ব্যবহৃত সফটওয়্যার সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। আর জন্যই প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রফেশনাল ডিগ্রি অর্জন। বাংলাদেশে ট্র্যাভেল এজেন্সির প্রশিক্ষণ অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রদান করে থাকে। তবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং বিমান বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদেয় ট্রেনিং প্রোগ্রামটি একজন ব্যক্তিকে ট্র্যাভেল এজেন্সি শিল্পে দক্ষ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে প্রশিক্ষণটির নাম হলো ‘ট্র্যাভেল এজেন্সি অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর’। ১৮ সপ্তাহব্যাপী এই কোর্সটি করতে একজন ব্যক্তিকে ন্যূনতম এইচএসসি উত্তীর্ণ হতে হবে। এই প্রশিক্ষণ কোর্সে যে সব বিষয় শেখানো হয়, তা হলো
১. আইএটিএ কনফারেন্স এরিয়া
২. আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেল জিওগ্রাফি সম্বন্ধে বিশদ শিক্ষা
৩. বিভিন্ন ট্যুরের খরচ সম্পর্কিত তথ্য
৪. ট্যুর অপারেশনের সময় ট্যুরিস্টদের মূল্যায়ন
৫. বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সির কার্যপদ্ধতি
৬. ট্র্যাভেল ম্যানুয়েলের ব্যবহার
৭. টিকিটের মূল্য এবং টিকিটিংয়ের কর্মপদ্ধতি
৮. ইংরেজি ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ
৯. রিজার্ভেশন অফিসারের দক্ষতা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ
১০. ট্র্যাভেল এজেন্সি অপারেশনস ও ম্যানেজমেন্টের ধারণা
এর বাইরেও ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু পদ রয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাগ্রহণ করে এসব পদে যোগ দিয়ে ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। এ রকম কয়েকটি পেশা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো।
ট্যুর ম্যানেজার : প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোনো স্থানে ট্যুর পরিচালনার সম্ভাব্যতা যাচাই, প্ল্যানিং, খরচ এবং লিয়াজোঁ মেইন্টেইন করা ট্যুর ম্যানেজারের দায়িত্ব। ট্যুর ম্যানেজার ট্যুরে অংশ নেন না। কিন্তু ট্যুরের সমস্ত লাভ-লোকসানের দায়িত্ব তাকে বহন করতে হয়।
ট্যুর অপারেটর : ট্যুর অপারেটরের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত প্যাকেজ ট্যুরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা। একজন ট্যুর অপারেটরের ট্যুরসংক্রান্ত যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকতে হয়। ট্যুর অপারেশন পরিচালনাকারী হিসেবে তার ওপর সমস্ত দায়িত্ব অর্পিত হয়। ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী যে কেউ ‘ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম’ কোর্সটিসম্পন্ন করার মাধ্যমে এ পেশাতে আসতে পারে।
ট্যুর গাইড : পদের নামের সঙ্গেই এই পেশার কাজের পরিধি চিহ্নিত করা যায়। মূলত ট্যুর পরিচালনার সময় ট্যুর গাইডকে ট্যুরিস্টদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে নিয়ে যেতে হয় এবং সে স্থানের ইতিহাস এবং বৈশিষ্ট্য বিশদভাবে জানাতে হয়। এই পেশাতে আসতে হলেও ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি এবং ইংরেজিতে দক্ষতাসহ অন্য যে কোনো বিদেশি ভাষার ওপর দখল থাকা আবশ্যক। সেই সঙ্গে ভৌগোলিক জ্ঞানেও পারদর্শী হতে হয়। মাহমুদ সালেহীন খান