শাড়িতে কিভাবে বাটিক প্রিন্ট করা যায়

সাধারণত নিজে যেমন পারিবারিক ভাবে এই ব্যবসা করা যায় তেমনি এলাকায় অবস্থিত কাপড়ের দোকান বা সমিতির মাধ্যমে পরিচিত কয়েকজনকে নিয়েও বাটিকের ব্যবসা করা সম্ভব৷ এটা বলা দরকার যে, যেকোনো ধরনের কাপড়ে বাটিক নকশা করার পদ্ধতি মূলত একই৷ তবে কাপড়ের ধরনের উপর ভিত্তি করে নকশা, রং ও উপকরণের পরিমাণ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে৷ এখন জেনে নেই একটি সুতি শাড়িতে কিভাবে এই প্রিন্ট করা যেতে পারে ও তাতে কেমন খরচ হতে পারে:


বাটিকের শাড়ি
আবহমান বাংলার ইতিহাসে শাড়ির স্থান এখনও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ যুগে যুগে এর পাড়, আঁচল, পরার ধরন ও বুনন কৌশল পাল্টালেও এদেশে এখনও এটি নারীদের সবচেয়ে পছন্দের পোশাক৷ সব শ্রেণীর মহিলা ও কিশোরীরাই শাড়ি পরেন যদিও পরার ধরন ও মানের ভিন্নতা হয়ে থাকে৷ বর্তমানে দেশের প্রায় সব জায়গাতেই নানা নকশার নানারকম শাড়ি দেখতে পাওয়া যায়৷ এক্ষেত্রে বাটিক বা টাইডাই প্রিন্টের তৈরি এই পোশাক এখন সবাই পছন্দ করে৷ সংক্ষেপে জেনে নেই যেকোন সিল্ক বা সুতি শাড়িতে কিভাবে এই নকশা করতে হবে:

সুতি বা সিল্কের শাড়িতে বাটিক প্রিন্ট কিভাবে করতে হবে
ইতিপূর্বে যেভাবে কাপড়ে বাটিকের ছাপ করার আগে কিছু প্রস্তুতি নেবার কথা বলা হয়েছে ঠিক সেভাবেই শাড়ি তৈরিতেও সেগুলো অনুসরণ করতে হবে৷ শেখার সুবিধার জন্য আরেকবার জেনে নেই সেগুলো কি কি:

        শাড়ি ধোয়া
        শাড়িতে মোম লাগানো
        শাড়িতে রং লাগানো
        শাড়িতে মোম ছাড়ানো
        এরপর ঠিক আগের মতই ধাপে ধাপে যেকোনো সিল্ক বা সুতি শাড়িতে বাটিক করতে হবে৷

শাড়িতে বাটিক প্রিন্ট করার ব্যবসায় কি ধরনের আয় বা খরচ হতে পারে
এখানে প্রুশিয়ান পদ্ধতিতে ২৪ মিটার কাপড়ে (৪টি শাড়ি) ২ রঙে বাটিক করতে আনুমানিক কত টাকা খরচ হতে পারে তার একটি হিসাব দেওয়া হল-

সবসময়ের জন্য দরকারি জিনিস
উপকরণের নাম    উপকরণের পরিমাণ    উপকরণের দাম(টাকায়)
যেকোন চুলা           ১ টা    ১০০
বালতি                  ১ টা    ৬০
গামলা                  ১ টা    ৬০
নকশা                   প্রয়োজনমত    ৫০
জান্টিং                  ১ টা    ২০০
বিভিন্ন মাপের তুলি    ৩ টা    ১০০
বিভিন্ন মাপের ব্রাশ    ৩ টা    ১০০
টেবিল                  ১ টা    ১০০০
কাঠের স্কেল           ১ টা    ১০
বাটি                    ১ টা    ৫
আলপিন                ১০ টা    ৫
          মোট টাকা=    ১৬ঌ০

তাৎক্ষনিক ভাবে দরকারি জিনিস
উপকরণের নাম        উপকরণের পরিমাণ    উপকরণের দাম (টাকায়)
ট্রেসিং পেপার                  ২ টা    ৬
পুরানো খবরের কাগজ       ২ টা    ৫
কার্বন পেপার                  ১ টা    ৩
পেন্সিল                          ১ টা    ৩
রাবার                           ১ টা    ৩
প্যারাফিন বা সাদা মোম      ২৪০০ গ্রাম    ঌ৬
মৌমাছি মোম (লাল মোম)    ১২০০ গ্রাম    ৪৮
রজন                            ৬০০ গ্রাম    ২৪
কাপড় কাচার সোডা           ৩ কেজি বা ৩০০০ গ্রাম    ৬০
খাবার লবণ                     ২ ছটাক    ২
তুলি                              ২ টা    ২০
কাপড়                           ২৪ মিটার    ৮০০
গুঁড়ো সাবান                    ৪৮ টেবিল চামচ    ৪০
রবিনব্লু (কাপড়ে দেবার নীল)    ২৪ চা চামচ    ২০
কেরোসিন            ১০ তোলা    ৪
প্রুশিয়ান রং        ২৪ তোলা    ১২০
মোট টাকা =        ১২৫৪

এখন প্রুশিয়ান পদ্ধতিতে ২৪ মিটার কাপড় (৪টি শাড়ি) ২ রঙে বাটিক প্রিন্টের জন্য মোট খরচ কেমন তা জানা দরকার৷ যেহেতু স্থায়ী জিনিসগুলি দিয়ে দীর্ঘদিন কাপড়ে বাটিক প্রিন্ট করা যায় তাই বাটিক প্রিন্টের খরচের হিসাব করার সময় স্থায়ী জিনিসের পুরো দাম হিসাবে ধরা ঠিক নয়৷ আবার মনে রাখা দরকার স্থায়ী জিনিসগুলি ব্যবহারে ক্ষয় হয়৷ তাই খরচের হিসাবের সময় স্থায়ী উপকরণের ক্ষয় বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার অংক বাদ দিতে হয়৷ এজন্য সাধারণত স্থায়ী উপকরণ ক্রয়ে মোট টাকার ০.১০% ক্ষয় হিসাবে ধরতে হয়৷ এভাবে মোট খরচ হতে পারে:

স্থায়ী জিনিসের ক্ষতি বাবদ (১৮৫০.০০ টাকার ০.১০%)    ১.৬ঌ টাকা
কাঁচামালের খরচ                                                  ১,২৫৪.০০ টাকা
অন্যান্য খরচ(যেমন- যাতায়াত খরচ)                          ১০০.০০ টাকা
                    মোট খরচ    ১,৩৫৫.৬ঌ টাকা

আমরা মনে করি, ২৪ মিটার কাপড়ের (৪টি শাড়ি) বিক্রয় মূল্য=(৪০০.০০(৪) টাকা= ১৬০০.০০ টাকা৷ এখন ১৬০০.০০ টাকা থেকে মোট খরচ ১,৩৫৫.৬ঌ টাকা বাদ দিলে থাকবে (১৬০০.০০-১,৩৫৫.৬ঌ) = ২৪৪.৩১ টাকা৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে ২৪ মিটার কাপড় (৪টি শাড়ি) বিক্রয় করে লাভ হবে- ২৪৪.৩১ টাকা৷ আবার ৪৮ মিটার কাপড় বাটিক প্রিন্ট করে বিক্রি করলে লাভ হবে দ্বিগুণ৷ সুতরাং যত বেশি কাপড় বাটিক করে বিক্রি করা যাবে তত বেশি লাভ হবে৷ অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা করে৷ তাই মনে রাখতে হবে এই হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য দেওয়া হল৷
তথ্য সূত্র : ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন (২০০২ :২ঌ, ৩০ ও ৩১): বাটিক প্রিন্ট

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্লক প্রিন্টের মত বাটিক প্রিন্টও আজকাল বেশ জনপ্রিয় একটি পেশা যার মাধ্যমে গ্রামের অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতীরা আজ স্ব-কর্মসংস্থানের পথে নিয়োজিত৷ তাই একটি চাহিদা সম্পন্ন অকৃষি কর্মকান্ড হিসেবে বাটিক প্রিন্ট করার পদ্ধতি সহজে শিখে ঘরে বসে ভালো আয় করার সুযোগ আজ সবারই বোধগম্য৷