গানের কবির পেশা ও ছন্দ জানা

আয়ের ধারাবাহিকতা না থাকায় গানের কবিতা লেখাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করার তেমন সুযোগ এখন নেই বললেই চলে।

অতীতে আমাদের বিশ্বকবি,বিদ্রোহী কবি কিংবা বর্তমানের গাজী মাজহারুল আনোয়ার,মোহাম্মদ রফিক উজজামান, হুমায়ুন আহমেদ প্রমুখ  পেরেছিলেন কিংবা পারছেন তাঁদের বহুমাত্রিক  প্রতিভার কারণে।এছাড়া বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব কবি সাহিত্যিক অন্য পেশায় থেকে সাহিত্য সাধনা করে গেছেন।


অন্য সবার মতোই কবি এবং লেখকগণ জীবন ও পরিবারের ভরণপোষণের জন্য নিশ্চিত আয়ের পথ খোঁজেন।তাই দেখা যায় জগৎবিখ্যাত কবি লেখক থেকে শুরু করে হালের নবীন কবি লেখকগণও কোন না কোন পেশার সাথে জড়িয়ে  থাকেন। কবি লেখকগণ দক্ষ কলম সৈনিক।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর তাঁদের বিশেষ দক্ষতা থাকে, তাই বরাবর তাঁদের কর্মক্ষেত্র হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছে সংবাদিকতা কিংবা শিক্ষকতার মত সৃজনশীল পেশা।

আজকের কবির বকুল, জুলফিকার রাসেল,রবিউল ইসলাম জীবন, জাহিদ আকবর,অনুরুপ আইচ, ফয়সাল রাব্বিকীন, সোমেশ্বর অলি,সুদীপ কুমার দ্বীপ, তারেক আনন্দ সহ আরো অনেক তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল গানের কবি কর্মক্ষেত্র  হিসাবে সংবাদপত্রকে বেছে নিয়েছেন। এছাড়া শফিক তুহিন, প্লাবন কোরেশী, মিনারের মতো সফল গানের কবিগণ গানের সুর করা, সংগীত পরিচালনা, গানে কণ্ঠ দেয়ার মতো অন্যান্য কাজে সংশ্লিষ্ট আছেন।

এই সময়ের আলোচিত ১০টি গানের প্রায় সব কটিই তরুণ লিখিয়েদের কলম থেকেই এসেছে। হালের সিনেমার গানগুলোও তাঁরাই  করছেন। সময়ের চাহিদাকে সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারা, সময়োপযোগী শব্দ-বাক্য চয়ন,বিষয়ের বৈচিত্র্যময় প্রকাশ,সুর আর সংগীতের বৈশ্বিক অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে পারা এসবই নবীনদের সাফল্যের কারণ।

অতীতে কোনও এক সময় ব্যাপক সাফল্য পাওয়া কোনও কোনও গানের কবি হালনাগাদ হতে না পেরে,সময়ের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে নতুনদের নিয়ে আপত্তিকর সমালোচনায় মেতেছেন।

এরা কিছুই পারছেনা, যোগ্যতা নেই,কিছুই হচ্ছেনা,ছন্দ বোঝে না,সব ধ্বংস করে দিচ্ছে,কেউ টিকবে না ইত্যাদি। আরো দোষ তারা সাংবাদিকতা করেন। তাও আবার বিনোদন সাংবাদিকতা!

এসবের জিকির তুলে কেউ কেউ স্বীয় আত্মাকে পরিতৃপ্ত করছেন আর তাদের সাথে তিন প্রকার ছন্দের আদ্যোপান্ত মুখস্ত করে বিখ্যাত গীতিকবি হওয়ার অপেক্ষায় থাকা একদল ব্যাপক জানিস্তর লোক দোয়ার ধরছেন! আফসোস হয় এই ভেবে যে, তারা মনে করছেন নিখুঁত ভাবে ছন্দ জানলেই বড় কবি হওয়া যাবে। গানের কবির ছন্দ জানার প্রয়োজন থাকলেও কবি হওয়ার জন্য ছন্দ শেখা খুবই হাস্যকর।

যাঁরা প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক হয়েছেন এবং গান লিখে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তাঁদের জন্য ছন্দ শেখা কি খুবই কঠিন কাজ? অবাক হই ছন্দ শিক্ষিত এমন সব ব্যক্তিরা এসব সমালোচনার রসদ যোগায় যাদের একটি গানও রেকর্ড হয়নি, উল্লেখ করার মতো কোনও পেশাগত পরিচয়ও নেই।হতাশাগ্রস্ত এইসব তরুণ ছন্দ শিখে স্বপ্ন দেখছেন একদিন বড় গীতিকার হবেন!

স্বপ্ন দেখা দোষের নয়। তবে যোগ্যতা না থাকলে শুধু অন্যের সমালোচনা করে নিজের যায়গা পোক্ত করা যায় না।

লেখক : সহকারী শিক্ষক, ঢাকা ক্যান্ট গার্লস পাবলিক স্কুল ও কলেজ